গল্পঃ ভালোবাসি-ভালোবাসি     লেখকঃ ভাস্কর পাল




 ভালোবাসি-ভালোবাসি 


তোমারে আমি দেখি নাই কভু, তবুও আমার এই চাতকের মতো মনটাকে এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশায় অপেক্ষারত করিয়া তুলিয়াছো; আমার এই কল্পনাবিলাসী মনটাকে বারংবার ভাবিয়া তুলেতে। চক্ষু-বন্ধ রত অবস্থায় অন্ধকারে বারে-বারে আঁকিতে হইয়াছে তোমার সেই অপ্রকাশিত মুখোমণ্ডলী। ছোট-ছোট শব্দে তোমারে বর্ণনা করিতে বেশ লাগিত, তবে সেই শব্দগুলি জড়ো হইয়া কাব্যের আকার লইবে তাহা বুঝিতে পারি নাই।

তুমি বহু দূরে তবু কেন জানি না, তুমি রোজ আসো।

তুমি আসো আমার কল্পনার কাল্পনিক ভাবনা লইয়া, নয়তো আসো এক পড়ন্ত রৌদ্র-মাখা দিনের মধ্যাহ্নের একাকীত্বতা হইয়া।

নাম, ঠিকানা, পরিচয় কিছুই তো জানি না, তবে তোমার সেই কাজল-কালো আঁখিতে আমার নেত্র পড়িলে কেমন যেন হারাইয়া যাই। আর নির্দ্বিধায় বলিয়া বসি চারু....চারু........কিন্তু তুমি নির্বাক।

তোমার গায়ের গন্ধ আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয়তেও বারে-বারে আঘাত আনে। এক মেঠো অচেনা গন্ধে আমার চেতনাতীত মন কোথায় হারাইয়া যায় তাহা আমি নিজেও বুঝিয়া উঠিতে পারি না। এই বুঝিয়া ওঠিবার আগেই তুমি আসিয়া উপস্থিত হও আমার সেই একলা ঘরে। আমি বসিয়া থাকি কাঠের দোলন চেয়ারে। আর তুমি ঠিক আমার মাথার কাছে দাঁড়াইয়া কী যেন এক চিন্তায় চিন্তিত থাকিয়া, আমার চুলে অঙ্গুলি দিয়া বিলি কাটো। আমি সেই অমৃত সুখ নষ্ট করিতে না পারিয়া কখন নিদ্রায় চলিয়া যাই তাহা আমি জানি না। তবে চোখ খুলিয়া যখন তোমায় ধরিতে যাই তুমি আর থাকো না। শুধু থাকিয়া যায় তোমার গায়ের সেই চারু-চারু গন্ধটা।

তাহার পরে এক রাত্রিতে যখন বাহিরে বৃষ্টি নামে, সেই বৃষ্টির সঙ্গিনীও তুমি। বৃষ্টির ধ্বনি শুনিয়া ছুটিয়া যাও উঠোন পানে, আমি তোমার পিছু-পিছু। খোলা লম্বা কেশ লইয়া অঝোরে ঝরা বৃষ্টিতে যখন তুমি ভিজাইয়া তোলো নিজেকে, আমি তখন দূর হইতে তোমার ঐ ছেলেমানুষিটা পাগলামির স্বরূপ দেখিয়া আমার হৃদয়ে সুর বুনি। বৃষ্টির শব্দ তোমার পায়ের নূপুর ধ্বনির সঙ্গে মিশিয়া যে নব সুর তৈরি করে, তাহা আমার কর্ণে চেতনা আনে। তুমি হঠাৎ বৃষ্টির সহিত মিলিয়া যাও। আর আমি তব অপেক্ষায় চাহিয়া থাকি ঐ বৃষ্টির পানে।

আমার কলমে ফুটিয়া ওঠে তোমার কাব্যিখানি, আর ক্ষণে ক্ষণে আমার পরানে বাজিয়া ওঠে এক তরঙ্গ-ধ্বনি 'ভালোবাসি-ভালোবাসি'।